মহাকাশ গবেষণায় ইতিহাস সৃষ্টি ভারতের। চাঁদের বুকে সফল অবতরণ চন্দ্রযান ৩ (Chandrayaan 3) এর। নির্ধারিত সময়ের এক মিনিট আগেই চাঁদের বুকে নামে ল্যান্ডার বিক্রম। সঙ্গে সঙ্গে উচ্ছাসে মেতে ওঠেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। একইসঙ্গে ভার্চুয়ালি ইসরোর উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। চাঁদের দক্ষিণ মেরু জয়ের জন্য ইসরো তথা গোটা দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী।
ইতিহাস তৈরি করেছে ভারত। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযানের সফল অবতরণ করিয়েছে ভারত।ভারতীয় সময় অনুযায়ী, ২৩শে আগস্ট সন্ধ্যা 6টা 04 মিনিটে অবতরণের কথা ছিল যানটির। কিন্তু তার তার আগেই , চন্দ্রযান-3 চাঁদের দক্ষিণ মেরুর পৃষ্ঠে অবতরণ করেছে। ভারত বিশ্বের চতুর্থ দেশ হয়ে উঠেছে। চন্দ্রযান-3-এর সফল অবতরণের পেছনে ISRO-এর 16,500 বিজ্ঞানী গত চার বছর ধরে যে কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন, তা সম্পূর্ণ হয়েছে। সফট ল্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে বিশ্বের চারটি দেশের তালিকায় এখন নাম যুক্ত হয়েছে ভারতেরও।
যদিও এই পথ সহজ ছিল না। কারণ চার বছর আগে জুলাই মাসেই রওনা দিয়েছিল চন্দ্রযান-2। প্রথম দফায় উৎক্ষেপনের আগে রকেটের জ্বালানির ট্যাঙ্কারে ফুটো ধরা পড়েছিল। এক সপ্তাহ পরে সেই ট্যাংকার সারিয়ে রওনা দিয়েছিল ভারতের দূত তথা চন্দ্রযান-2। তবে অভিযান সফল হয়নি চাঁদের মাটিতে অবতরণের আগে মুখ থুবড়ে পড়েছিল সে। এবার চন্দ্রযান-3 (Chandrayaan 3) গত শুক্রবার 14 জুলাই বেলা ২:৩৫:৫৭ সেকেন্ডে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরি কোটার সতীশ ধবন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র থেকে রওনা দিয়েছিল।
চাঁদ কিংবা মঙ্গলের গ্রহের কক্ষপথে নিজেদের দূতকে পৌঁছাতে পারলেও এর আগে পর্যন্ত ভিনগ্রহের মাটি স্পর্শ করতে পারেনি ভারতীয় গবেষণা সংস্থা ISRO। সে দিক থেকে Chandrayaan 3 তাৎপর্য আলাদা। গতবারের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে এবার অভিযানে নেমেছিলেন বিজ্ঞানীরা। এই অভিযানের খরচ হয়েছিল 615 কোটি টাকা।
Read More
Chandrayaan 3 Details
প্রপালশন মডিউল
চন্দ্রযান-৩ একটি প্রপালশন মডিউল নিয়ে গঠিত। এতে ল্যান্ডার মডিউল এবং রোভার আছে। এই মিশনে প্রপালশন মডিউল ল্যান্ডারকে বহন করবে । ল্যান্ডার এবং রোভারকে পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে 100 কিলোমিটার চন্দ্র কক্ষপথে নিয়ে যাবে।
এটি চন্দ্রের কক্ষপথ থেকে পৃথিবীর বর্ণালী এবং পোলারিমেট্রিক পরিমাপ অধ্যয়ন করার জন্য একটি স্পেকট্রো-পোলারিমেট্রি (SHAPE )পেলোড বহন করছে। প্রোপালশন মডিউলের প্রধান কাজ হল লঞ্চ ভেহিকেল ইনজেকশন কক্ষপথ থেকে ল্যান্ডার বিচ্ছেদ পর্যন্ত LM বহন করা।
পেলোড উদ্দেশ্য হলো বাসযোগ্য প্ল্যানেট আর্থের স্পেকট্রো-পোলারিমেট্রি (শেপ) প্রতিফলিত আলোতে ছোট গ্রহের ভবিষ্যত আবিষ্কার আমাদেরকে বিভিন্ন ধরনের এক্সো-প্ল্যানেট অনুসন্ধান করার অনুমতি দেবে যা বাসযোগ্যতার (বা প্রাণের উপস্থিতির জন্য) যোগ্যতা অর্জন করবে।
ল্যান্ডার:
ল্যান্ডারের প্রধান কাজ হল চাঁদের সফট ল্যান্ডিং। এটি দেখতে অনেকটা বাক্সের মত যার চারটি ৮০০ নিউটনের ল্যান্ডিং থ্রাস্টার পা রয়েছে। এছাড়া ইনসাইড বিশ্লেষণ করার জন্য এটি রোভার এবং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক যন্ত্র বহন করবে।
চন্দ্রযান-3 এর ল্যান্ডারে থাকবে মাত্র চারটি ছোট সক্ষম ইঞ্জিন । চন্দ্রযান-2 এর বিক্রমের বিপরীতে যেখানে পাঁচটি 800 নিউটন ইঞ্জিন ছিল এবং পঞ্চমটি একটি নির্দিষ্ট থ্রাস্টের সাথে কেন্দ্রীয়ভাবে মাউন্ট করা হয়েছিল । এছাড়া চন্দ্রযান-3 এর লেন্ডারে লেজার ডাবলার ভেলোসি মিটার এলডিভি আছে চন্দ্রজান-2 এর তুলনায় লন্ডনের ইম্প্যাক্ট পা আরো শক্তিশালী করা হয়েছে।
ল্যান্ডারের পেলোড
তাপ পরিবাহিতা এবং তাপমাত্রা পরিমাপ করতে চন্দ্রের সারফেস থার্মোফিজিকাল এক্সপেরিমেন্ট (ChaSTE); ল্যান্ডিং সাইটের চারপাশে ভূমিকম্প পরিমাপের জন্য লুনার সিসমিক অ্যাক্টিভিটি (আইএলএসএ) এর জন্য যন্ত্র; ল্যাংমুইর প্রোব (এলপি) প্লাজমা ঘনত্ব এবং এর বৈচিত্র অনুমান করতে। NASA থেকে একটি প্যাসিভ লেজার রেট্রোরিফ্লেক্টর অ্যারে চন্দ্র লেজার রেঞ্জিং অধ্যয়নের জন্য স্থান পেয়েছে।
ল্যান্ডারের তিনটি পেলোড রয়েছে এর কাজ
- রেডিও অ্যানাটমি অফ মুন বাউন্ড হাইপারসেনসিটিভ আয়নোস্ফিয়ার অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ার (RAMBHA) ল্যাংমুইর প্রোব (LP) কাছাকাছি-পৃষ্ঠের প্লাজমা (আয়ন এবং ইলেকট্রন) ঘনত্ব এবং সময়ের সাথে এর পরিবর্তনগুলি পরিমাপ করতে ।
- চন্দ্রের সারফেস থার্মো ফিজিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট (ChaSTE) মেরু অঞ্চলের কাছাকাছি চন্দ্র পৃষ্ঠের তাপীয় বৈশিষ্ট্যের পরিমাপ করা।
- লুনার সিসমিক অ্যাক্টিভিটি (ILSA) ল্যান্ডিং সাইটের চারপাশে ভূমিকম্প পরিমাপ করা এবং চন্দ্রের ভূত্বক এবং ম্যান্টেলের গঠন বর্ণনা করা।
- লেজার রেট্রোরেফ্লেক্টর অ্যারে (এলআরএ) এটি চাঁদ সিস্টেমের গতিশীলতা বোঝার জন্য একটি নিষ্ক্রিয় পরীক্ষা।
রোভার
রোভার ছয় টাকা বিশিষ্ট, এর ওজন ২৬ কিলোগ্রাম বা ৫৭ পাউন্ড। এর পরিসর হল ৫০০ মিটার বা ১৬০০ ফুট এরিয়া কভার করবে । এছাড়া ক্যামেরা পেট্রোমিটার স্পেক এবং একটি ড্রিল সহ বৈজ্ঞানিক যন্ত্র এর আইন হলো এক চন্দ্র দিবস অর্থাৎ পৃথিবীর হিসেবে ১৪ দিন এই রোভার এ কাজ হবে সমস্ত রকম অনুসন্ধান করে লেন্ডারের সাহায্যে গ্রাম কন্ট্রোল টিমের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা
রোভার পেলোড:
আলফা পার্টিকেল এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার (এপিএক্সএস) এবং লেজার ইনডিউসড ব্রেকডাউন স্পেকট্রোস্কোপ (এলআইবিএস) অবতরণ সাইটের আশেপাশে মৌলিক রচনার জন্য।
রোভার এর প্রধান কাজ হল আলফা পাটিকেল এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার (APXS) রাসায়নিক গঠন আরোহন করবে এবং চন্দ্রপৃষ্ঠের খনিজ গঠনের অনুমান করবে । আবার লেজার ইনডিউসড ব্রেকডাউন স্পেকট্রোস্কোপ (LIBS) চন্দ্র অবতরণ স্থানের চারপাশে র মাটি এবং শিলা গুলির মৌলিক প্রকৃতি অনুমান করবে।
Chandrayaan 3 কীভাবে চাঁদের মাটিতে পদার্পন করেছে?
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযানের সফল অবতরণ করিয়েছে ভারত।ভারতীয় সময় অনুযায়ী, ২৩শে আগস্ট সন্ধ্যা 6টা 04 মিনিটে অবতরণের কথা ছিল যানটির। কিন্তু তার তার আগেই, চন্দ্রযান-3 চাঁদের দক্ষিণ মেরুর পৃষ্ঠে অবতরণ করেছে।
Chandrayaan 3 এ একটি ল্যান্ডার এবং রোভার কনফিগারেশন রয়েছে। এই মিশনের মূল উদ্দেশ্য ছিল, চাঁদে একটি নিরাপদ সফট ল্যান্ডিং করা। কিন্তু এই সফট ল্যান্ডিং কী? নিজের বা পেলোডের কোনওরকম ক্ষতি না করে মহাকাশযানটির নির্বিঘ্নে অবতরণকে বলে ‘সফট ল্যান্ডিং’। যেসব দেশ আগেই এই কৃতিত্ব অর্জন করেছে তাদের মধ্যে রয়েছে আমেরিকা, রাশিয়া ও চিন। এখন সফট ল্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে ভারতও বিশ্বের চতুর্থ দেশ হয়ে উঠেছে। যদিও চন্দ্রযান-3 মিশনের আগে, চন্দ্রযান-2 মিশন 2019 সালের সেপ্টেম্বরে চাঁদের পৃষ্ঠে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়েছিল।
Chandrayaan 3 এর মিশনের লক্ষ্য:
- চন্দ্র পৃষ্ঠে নিরাপদ এবং সফট ল্যান্ডিং।
- চাঁদে রোভার ঘোরাফেরা প্রদর্শন করতে ।
- ইন-সিটু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালানোর জন্য।
আজ, এই পোস্টের মাধ্যমে, আমরা সমস্ত প্রার্থীদের জন্য মিশন Chandrayaan 3 in bengali সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বর্তমান প্রশ্নগুলি নিয়ে এসেছি, যা পরীক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হিসাবে প্রমাণিত হবে এবং এই প্রশ্নগুলি প্রধানত কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার দ্বারা পরিচালিত UPSC, WBCS, WBP, KP, RAIL, FOOD SI, SSC MTS , SSC CHSL, TET পরীক্ষায় দেখা যায়, তাই প্রার্থীদের অবশ্যই এই প্রশ্নগুলি আয়ত্ত করতে হবে।
প্রশ্ন. চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে প্রথম কোন দেশ পদার্পন করেছে ?
উত্তরঃ ভারত।
প্রশ্ন. ভারত কবে চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণ করেছিল?
উত্তর: 14 জুলাই 2023।
প্রশ্ন. ভারত কবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পদার্পন করেছে ?
উত্তর: ২৩শে আগস্ট সন্ধ্যা ৬টা 0২ মিনিটে ।
প্রশ্ন. চন্দ্রযান-৩ মিশনের উদ্দেশ্য কী?,
উত্তর: চাঁদের গঠন আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য।
প্রশ্ন. চন্দ্রযান-৩ চাঁদের কোথায় অবতরণ করেছে ?
উত্তরঃ চাঁদের দক্ষিণ মেরু।
প্রশ্ন. কত দিন ভ্রমণের পর চন্দ্রযান-৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করেছে?
উত্তর: প্রায় 45 থেকে 50 দিন।
প্রশ্ন. Chandrayaan 3 এর ফলোআপ মিশন?
উত্তরঃ চন্দ্রযান-২।
প্রশ্ন. চন্দ্রযান-৩ এর জন্য কি ডিজাইন করা হয়নি?
উত্তরঃ অরবিটার।
প্রশ্ন. চন্দ্রযান-৩-এ অরবিটারের পরিবর্তে কী ব্যবহার করা হয়েছে?
উত্তরঃ আদিবাসী প্রপালশন মডিউল।
প্রশ্ন. Chandrayaan 3 এ কী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে?
উত্তরঃ ল্যান্ডার এবং রোভার কনফিগারেশন।
প্রশ্ন. চন্দ্রযান-২-এ কী ছিল?
উত্তরঃ ল্যান্ডার, রোভার এবং অরবিটার।
প্রশ্ন. চন্দ্রযান-3 কোন রকেট থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল?
উত্তরঃ LVM3- M4।
প্রশ্ন. LVM-3 দ্বারা চন্দ্রযান-3 কোথা থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল?
উত্তরঃ শ্রীহরিকোটা।
প্রশ্ন. মিশন চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডারের নাম কি?
উত্তরঃ বিক্রম।
প্রশ্ন. মিশন চন্দ্রযান-৩ এর রোভারের নাম কি?
উত্তরঃ প্রজ্ঞান।
প্রশ্ন. বর্তমানে ISRO-এর চেয়ারম্যান কে?
উত্তরঃ এস সোমনাথ।
প্রশ্ন. চন্দ্রযান-৩ এর প্রধান ইঞ্জিনের নাম কি?
উত্তরঃ CE – 20 Cryogenic Engine।
প্রশ্ন. মিশন চন্দ্রযান-৩ এর থিমের নাম কি?
উত্তর: ‘চাঁদের বিজ্ঞান’।
প্রশ্ন. কোন অংশটি একটি মহাকাশ মিশনে যাওয়া যানবাহনের প্রথম অংশ এবং এটি যেকোনো মহাকাশযানকে ওড়ার ক্ষমতা দেয়।
উত্তরঃ প্রপালশন মডিউল।
প্রশ্ন. চন্দ্রযান 3 এর অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ অংশটি চাঁদে অবতরণ করেছে এবং এটি রোভারটিকে সঠিক উপায়ে চাঁদের পৃষ্ঠে নিয়ে যাওয়ার জন্যও দায়ী?
উত্তরঃ ল্যান্ডার মডিউল।